বিদেশ যাওয়ার প্রস্তুতি হিসেবে যেসব কাজ অবশ্যই করা উচিত।
October 19, 2024বিদেশ যাওয়ার প্রস্তুতি ও করণীয় সমূহ। কাজ করার জন্য বিদেশ যাওয়ার আগে একজন প্রবাসীর যেসব কাজগুলো অবশ্যই করা উচিত।
বিদেশ যাওয়ার প্রস্তুতি ও করণীয় সমূহ। কাজ করার জন্য বিদেশ যাওয়ার আগে একজন প্রবাসীর যেসব কাজগুলো অবশ্যই করা উচিত।
বুদ্ধিমান কাজ হলো যে, কোন কাজ শরুর করার আগে একটি পরিকল্পনা এবং বিকল্প পরিকল্পনা তৈরি করা। অর্থাৎ একাধিক পরিকল্পনা তৈরী করা এবং সেগুলো যাচাই বাচাই করে যেটি ভালো হয় সেটিকে চূড়ান্তভাবে বাস্তবায়ন করা। একটি ভালো পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হয় অনেকগুলো ধাপে। আর সেই ধাপগুলোর মধ্যে যাতে তালগোল পাকিয়ে না যায়, সেজন্য একটি ডায়রি ব্যবহার করে নোট করে নিতে পারেন আপনার পরিকল্পনার ধাপগুলো।
আপনার পরিকল্পনা যদি হয় কাজ করার উদ্দেশ্যে বিদেশ যাওয়া, তাহলে, বিদেশ যাওয়ার প্রস্তুতি হিসেবে নিম্নে উল্লেখিত বিষয়গুলো, গুরুত্ব দিয়ে ধাপে ধাপে বাস্তবায়ন করা, আপনার যাত্রাকে অনেকখানি সহজ ও স্বস্তিদায়ক করে তুলবে ।
বিদেশ যাওয়ার প্রস্তুতি যেসব কাজ করা উচিত
মানসিক প্রস্তুতি গ্রহণ।
মানসিক প্রস্তুতি হলো সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে নিজের মনকে প্রস্তুত করা। কর্মের উদ্দেশ্যে বিদেশ ভ্রমণের সিদ্ধান্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত। এই সিদ্ধান্ত গ্রহণের পূর্বে আপনার শারীরিক, মানসিক, আর্থিক, পারিবারিক দিকগুলো বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। এছাড়াও সামনের চ্যালেঞ্জগুলোর জন্য নিজেকে মানসিকভাবে প্রস্তুত করা জরুরি।
খোঁজ খবর নেয়া।
এখন কোন দেশের কাজের কি পরিবেশ/অবস্থা এবং ভবিষ্যতে কেমন হতে পারে সেই বিষয়ে খোঁজ খবর নেয়া অত্যন্ত জরুরী। পরিচিত কেউ সেই দেশে আছে কি না, থাকলে তাঁর সাথে যোগাযোগ করে খোঁজ খবর নেয়া প্রয়োজন। তবে সাবধান, দালাল ও ভুয়া বাটপারের কাছ থেকে খোঁজ খবর নেওয়ার ভুল কোন ভাবেই করা যাবে না। কাউকে বিশ্বাস না করে নিজে নিজেই খোঁজ খবর নিতে হবে এবং তার সত্যতা যাচাই বাচাই করে দেখতে হবে।
কোন কোন উপায়ে সরকারিভাবে বিদেশ যাওয়া যায়, সে উপায়গুলোতে আপনার যাওয়া সম্ভব কিনা সে বিষয়ে খোজ নিতে পারেন। বেসরকারিভাবে যেতে চাইলে, কিভাবে রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে কিভাবে ভিসা সংগ্রহ করা যায়, রিক্রুটিং এজেন্সির সরকারি অনুমোদন আছে কি না, খরচ বেশি চাওয়া হচ্ছে কিনা, এই বিষয়গুলো যাচাই বাচাই করা উচিত। আর যদি কোনো আত্মীয়-স্বজন ভিসা দেয় তাহলে সেটাও ভালো করে যাচাই-বাচাই করতে হবে।
যে ভিসায় আপনি বিদেশ যেতে চাচ্ছেন সেটা কি ফ্রি ভিসা নাকি কোম্পানি ভিসা সেটা নিশ্চিত হতে হবে। ফ্রী ভিসায় বিদেশ যেতে পারবেন, তবে বিদেশ গিয়ে কাজ পাবেন কিনা তার কোনো নিশ্চয়তা নাই। তাই ফ্রী ভিসায় যাওয়ার আগে কাজ ঠিক করা জরুরী। যদি পরিচিত ব্যাক্তির মাধ্যমে যান তাহলে উনি কাজ দিবেন কিনা, আপনার যেসব কাজে দক্ষতা আছে যেসব কাজ ঐদেশে গিয়ে করতে পারবেন কিনা, এই বিষয়গুলো বিবেচনা করা উচিত।
কোম্পানি ভিসায় বিদেশ যেতে চাইলে ঐ কোম্পানি কন্ট্রাক্ট পেপার বা কাজের চুক্তিপত্র দেবে কিনা, এবং চুক্তিপত্র দিলে তার শর্তগুলো কি কি সেটা যাচাই করা উচিত। কন্ট্রাক্ট পেপার বা চুক্তিপত্র হলো কোম্পানি এবং আপনার মধ্যে একটা দলিল যেখানে কাজের ধরণ, সময় বা ঘন্টা, বেতন ও ভাতা, সাধারণ ও বার্ষিক ছুটি, থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা, বিমা সুবিধা এবং সংশ্লিষ্ট বিমা কোম্পানির নাম, ঠিকানা ও ফোন নাম্বার উল্লেখ থাকবে। এছাড়াও ভিয়ার মেয়াদ, চুক্তি নবায়ন সহ যাবতীয় তথ্য উল্ল্যেখ থাকবে। কোম্পানি ভিসায় এই তথ্যগুলো ভালো করে জানা এবং সেগুলো যাচাই করা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ আপনি যদি বিদেশ গিয়ে যদি ভালো বেতন না পান, অথবা ঐদেশে থাকার খরচ যদি বেশি হয়, অর্থাৎ আপনার আয়-ব্যায়ের হিসাবে যদি আপনার না পোষায় তাহলে ঐ ভিসায়/কাজে বিদেশ না যাওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।
এছাড়াও আপনার শারীরিক অবস্থা, বিদেশের কাজের ধরণ আপনার পছন্দ কিনা, ভিসার মেয়াদ, মেয়াদশেষে ভিসা নবায়নের সুযোগ এবং খরচ, ঐদেশের আবহাওয়া, ভাষা, ধর্ম ও মূল্যবোধ, এই বিষয়গুলোও বিবেচনা করা উচিত।
বর্তমানে ফ্রি ভিসার চেয়ে কোম্পানি ভিসায় বিদেশ যাওয়া ভালো। বিদেশ যাওয়ার ও কাজের, দুটোরই নিশ্চয়তা থাকে। তবে সেক্ষেত্রে চুক্তিপত্রের শর্তগুলো ভালোভাবে যাচাই করা জরুরী। কোন ভাবেই অবৈধ পথে বিদেশ যাওয়ার কথা চিন্তা করবেন না। এতে লাভের চেয়ে ক্ষতির সম্ভাবনাই বেশি। নিজের এবং পরিবারের নিশ্চয়তার জন্য বৈধ ভিসা নিয়ে, ট্রেনিং করে, সরকারি বিএমইটি কার্ড নিয়ে, এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে সরকারি ঋণ নিয়ে বৈধ পথে বিদেশ যাওয়া উচিত।
লাভ-ক্ষতির হিসাব করা।
দেশে আপনার বর্তমান পেশা এবং আয় রোজগার কেমন, দেশে আপনার বর্তমান পেশার ভবিষ্যৎ কেমন, বর্তমান পেশা বা ব্যবসায় ছেড়ে বিদেশ যাওয়া ভালো হবে কি না এই বিষয়গুলো সিদ্ধান্ত নেওয়ায় আগে যাচাই বাচাই করতে হবে।
বিদেশ যেতে কত টাকা খরচ হবে, ঐ পরিমাণ টাকা আপনার কাছে আছে কি না অথবা ঋণ করা সম্ভব কি না, বিদেশে গেলে কত টাকা বেতন পাবেন, ঐদেশে থাকা খাওয়ার পর আপনি কত টাকা বাড়িতে পাঠাতে পারবেন, কত দিনে আপনার বিদেশ যাওয়ার বিনিয়োগ উঠে আসবে, ঐ দেশে কাজের চাইতে দেশে কাজ করা ভালো হবে কিনা, এসকল বিষয়গুলো খোঁজ খবর নিয়ে ভালো করে হিসাব করে দেখতে হবে। সব দিক বিবেচনা করে যদি মনে হয়ে বিদেশ যাওয়া আপনার জন্য লাভবান হবে, তাহলে পরবর্তী ধাপে যেতে পারেন।
বাড়ির মুরুব্বী বা অভিভাবক এর সাথে আলাপ আলোচনা করা।
আপনি খোঁজ খবর নেওয়ার পর মনে হয় আপনার বিদেশ যাওয়া উচিত। এর পরবর্তী ধাপ্ হবে আপনার মুরুব্বী বা অভিবাবকের সাথে আপনার সিদ্ধান্ত এবং খোঁজ খবর নেওয়া তথ্যগুলো খোলাখুলি খোলোমেলাভাবে বিস্তারিত আলোচনা করা। ভুল সিদ্ধান্ত এড়াতে অভিবাবকের সাথে পরামর্শ করা এবং তাদের দোয়া নেয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
জন্ম নিবন্ধন এবং জাতীয় পরিচয় পত্র তৈরি অথবা সংশোধন করা।
জন্ম নিবন্ধন পত্র এবং জাতীয় পরিচয় পত্র পাসপোর্ট তৈরি করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। পাসপোর্ট করা না থাকলে এই ডকুমেন্টস গুলো তৈরি করে নিতে হবে। পাসপোর্ট করা থাকলে এগুলো নতুন করে তৈরি বা সংশোধনের প্রয়োজন নেই।
এগুলো তৈরি করার সময় খেলাল রাখবেন যেন আপনার নাম, পিতা-মাতার নাম, জন্ম তারিখ এবং ঠিকানা এগুলোতে যাতে ভুল না থাকে। আমাদের দেশে অনেকেরই সার্টিফিকেট, জন্ম নিবন্ধন পত্র এবং NID কার্ডের নামের বানার ভিন্ন হয়। এরকম থাকলে পরবর্তীতে পাসপোর্ট তৈরিতে সমস্যা হয়ে থাকে। তাই পড়াশুনার সার্টিফিকেট এর সাথে মিল করে জন্ম নিবন্ধন পত্র এবং NID কার্ড তৈরি করে নিতে হবে। আর যদি এগুলো তৈরি করা থাকে তাহলে এগুলোতে ভুল আছে কিনা দেখতে হবে এবং প্রয়োজনে ভুল সংশোধন করে নিতে হবে। জন্ম নিবন্ধন পত্র স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ অফিস এবং NID কার্ড স্থানীয় নির্বাচন অফিস থেকে তৈরি ও সংশোধন করা যাবে।
পাসপোর্ট তৈরী করা।
আপনার পাসপোর্ট করা না থাকলে পাসপোর্ট তৈরী করতে হবে। যদি পাসপোর্ট এর মেয়াদ অল্প কিছুদিন হয়ে থাকে তাহলে পাসপোর্ট নয়ায়ন করে নেওয়া উচিত। আপনার এলাকার অঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস হতে কোনো দালালের সাহায্য ছাড়াই আপনি নিজে নিজেই পাসপোর্ট তৈরি করতে পারবেন। প্রবাসী সেবায় কিভাবে নিজে নিজে পাসপোর্ট করা যায় সে সম্পর্কে সুন্দর করে লিখা আছে। নিচের লিংকে ক্লিক করে পাসপোর্ট অফিসের ঠিকানা এবং ই-পাসপোর্ট তৈরির উপায় জেনে নিতে পারবেন।
প্রশিক্ষণ গ্রহণ।
বিদেশ যাওয়ার পূর্বে কাজ এবং ভাষা প্রশিক্ষণ নেয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিদেশে গিয়ে দক্ষতার সাথে কাজ করতে না পারলে নানার সমস্যা তৈরি হতে পারে। তাই বিদেশ গমনের পুর্বেই আপনার কাজ সংশ্লিষ্ট ট্রেনিং নিয়ে নিন।
বিদেশে থাকা এবং কাজের জন্য ঐদেশের ভাষা জানাটাও অত্যত্ন গুরুত্বপূর্ণ। তাই বিদেশ যাওয়ার আগে ভাষা শেখাটাও বুদ্ধিমানের কাজ। বর্তমানে বাংলাদেশে মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ৪০টি টিটিসিতে ভাষা শিক্ষা প্রশিক্ষণ প্রদান দেয়া হচ্ছে। আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী ভাষার প্রশিক্ষণ গ্রহণ করুন। এছাড়াও সরকারীভাবে ৬৪টি টিটিসি এবং ৬টি আইএমটিতে বিভিন্ন মেয়াদে বিভিন্ন কাজের প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে। স্বল্প খরচ ও সময়ে এসব প্রশিক্ষণে অংশ নিয়ে কাজের ও ভাষাগত দক্ষাতার সার্টিফিকেট সংগ্রহ করা বিদেশে আপনার সাফল্য নিশ্চিত করতে অবদান রাখবে।
বৈধ কাজের ভিসার জন্য রেজিষ্ট্রেশন করুন।
আমি প্রবাসী অ্যাপ, সরকারি ভিসায় যাওয়ার জন্য বোয়েসেল এর ওয়েবসাইট অথবা আপনার নিজ জেলার DEMO অফিসে গিয়ে রেজিষ্ট্রেশন করুন। প্রবাসী সেবা অর্থাৎ আমাদের ওয়েব সাইটের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি অংশে এবং প্রবাসী সেবা পেসবুক পেজে নিয়মিত চোখ রাখুন। যদি রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে যেতে চান তাহলে সরকার অনুমোদিত বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সি‘র মাধ্যমে চেষ্টা করুন। কোন দালাল ও ভুয়া বাটপারের কাছে কোন ভাবেই যাওয়া যাবে না।
ভিসা ও কন্ট্রক্ট পেপার বা চুক্তিপত্র যাচাই করুন।
এখন বেশিরভাগ ভিসা (সৌদি আরব, কাতার, ওমান, সিঙ্গাপুর, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত) অনলাইনে যাচাই করা যায়। আপনার ভিসা যেই দেশের সেই দেশের ওয়েবসাইট থেকে ভিসা যাচাই করে প্রিন্ট করে নিন। ভিসা প্রদানকারীর কাছ থেকে কন্ট্রক্টপেপার বুঝে নিন এবং তার সকল শর্ত ভালো ভাবে একাধিকবার পড়ে বুঝে নিন। কন্ট্রক্ট পেপার ঐদেশী ভাষায় থাকলে তা বাংলায় অনুবাদ করে সকল শর্ত ভালো ভাবে বুঝে নিন। ভালোমত পড়ে ও বুঝে আপনি যদি সন্তুষ্ট থাকেন তাহলে কন্ট্রক্ট পেপার বা চুক্তিপত্র স্বাক্ষর করুন।
স্বাস্থ্য পরীক্ষা।
আপনি যে দেশে যাচ্ছেন সেই দেশের অনুমোদিত মেডিকেল সেন্টারে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করুন। স্বাস্থ্য পরীক্ষার কয়েক সেট ফটোকপি করে মূল কপি নিজের কাছে রাখুন।
পুলিশ ক্লিয়ারেন্স।
কোন কোন দেশের ভিসার ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলকভাবে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট নিতে হয়। আপনি যেই দেশের ভিসা নিচ্ছেন সেই দেশের জন্য পুলিশ ক্লিয়ারেন্স বাধ্যতামূলক কি না জেনে নিন। যদি বাধ্যতামূলক হয় তবে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স করে নিবেন।
প্রাক বর্হিগমন প্রশিক্ষণ। (PDO Training)
বিদেশ যাওয়ার পূর্বে ৩ (তিন) দিনের প্রাক বর্হিগমন প্রশিক্ষণ গ্রহণ করুন এবং সার্ঢিফিকেট সংগ্রহ করুন। বিভিন্ন জেলায় TTC তে এই ট্রেনিংটি করানো হয়ে থাকে। কয়েক সেট সার্টিফিকেট ফটোকপি করে মূল কপি নিজের কাছে রাখুন।
ফিঙ্গার প্রিন্ট বা আঙ্গুলের ছাপ।
আপনার নিকটস্থ ডিসট্রিক এমপ্লয়মেন্ট ম্যানপাওয়ার অফিস (ডিইএমও) বা জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসে ফিঙ্গার প্রিন্ট বা আঙ্গুলের ছাপ দিন।
বিএমইটির স্মার্ট কার্ড।
বিএমইটির স্মার্ট কার্ড গ্রহণ করুন। বিদেশে কাজ করতে যাওয়ার জন্য বিএমইটির ছাড়পত্র বাধ্যতামূলক। বিএমইটি আপনাকে ক্লিয়ার করার পরে, আপনি একটি কিউআর-কোড ভিত্তিক বিএমইটি স্মার্ট কার্ড পাবেন । এয়োরপোর্ট ইমিগ্রেশন পার হওয়ার জন্য আপনার বৈধ বিএমইটি স্মার্ট কার্ডের প্রয়োজন হবে।
ব্যাংক হিসাব খুলু্ন।
বিদেশ যাওয়ার পূর্বে নূন্যতম দুইটি যে কোন বাণিজ্যিক সরকারী অথবা বেসরকারী ব্যাংকে ব্যাংক হিসাব খুলু্ন। হিসাব খোলার সময় দেখে নিবেন ঐ ব্যাংকে ইন্টারনেট ব্যাংকিং সুবিধা আছে কি না। ঐ ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিটেন্স পাঠানো যায় কি না। ঐ ব্যাংকে আপনার পরিবারের দায়িত্বশীল একজনের হিসাব খুলে তাঁর হিসাবের সাথে আপনার ব্যাংক হিসাবের একটা লিংক করে নিবেন যাতে বিদেশ থেকে আপনি আপনার হিসাবে টাকা জমা করে তাঁর হিসাবে টাকা ট্রান্সফার করতে পরেন। আপনার ব্যাংক হিসাবে অবশ্যই নমিনী অংশ পূরণ করবেন এবং গুরুত্ব দিয়ে নমিনী নির্বাচন করবেন যাতে আপনার জীবনে কোন দুর্ঘটনা ঘটলে আপনার মনোনীত উপযুক্ত ব্যক্তি আপনার হিসাব হতে অর্থ তুলে নিতে বা বুঝে নিতে পারে। চেক বই ও কার্ড তুললে সেটা নিরাপদ স্থানে বা বিশ্বস্ত করো কাছে রাখুন। কোন ভাবেই চেক বই স্বারক করে রাখবেন না বা কার্ড এর পিন কোড কারো সাথে শেয়ার করবেন না। যে ব্যাংকের যেই শাখায় হিসাব খুলেছেন তার ঠিকানা ও ফোন নাম্বার, হিসাব নাম্বার নোট করে সঙ্গে নিবেন।
বিদেশ যাওয়ার পূর্বে সমস্ত কাগজপত্রের ৩ (তিন) সেট ফটোকপি করুন। এক সেট বাড়িতে দায়িত্বশীল করো কাছে রাখবেন, মূল সেট নিজের সাথে রাখবেন এবং এক সেট কর্মস্থলে অর্থাৎ বিদেশের বাসায় রাখবেন। সবচেয়ে ভালো হয় যদি মোবাইলে ছবি তুলে বা স্ক্যান করে ডকুমেন্টস গুলো গুগুল ড্রাইভে রাখা যায়। সেক্ষেত্রে মেইল এর পাসওয়ার্ড কারো সাথে শেয়ার করা যাবে না।
জরুরী ফোন নাম্বার ও তথ্য।
যে দেশে যাচ্ছেন সেই দেশে দূতাবাসের নম্বার, আপনার কর্মস্থলের ঠিকানা এবং নাম্বার, আপনার সহকর্মীর নাম্বার এই বিষয়গুলো সংগ্রহ করে নিজের কাছে এবং পরিবারের কাছে রাখুন।
এছাড়াও প্রবাসী কর্মী এবং তাঁদের পরিবারের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের জন্য ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড কর্তৃক প্রবাস বন্ধু কল সেন্টার স্থাপন করেছে। সকল প্রবাসী কর্মী এবং তাঁদের পরিবারের সদস্যরা সহজেই তাঁদের সমস্যাগুলি কল সেন্টারের মাধ্যমে সহজেই প্রতিকার পায়। কল সেন্টারের যোগাযোগ নাম্বার হলোঃ ১৬১৩৫ [টোল ফ্রি], +৮৮০৯৬১০১০২০৩০ [বিদেশ থেকে]
বিদেশ যাওয়ার জন্য প্রবাসী ঋণ/লোন নেওয়া।
বিদেশ যেতে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে পারবেন, এটাকে অভিবাসন ঋণ বলে। আপনি ঋণ নিতে চাইলে আপনার নিকটস্থ শাখায় ভিসা, পাসপোর্ট, কন্ট্রাক্ট পেপার, জাতীয় পরিচয়পত্র, বিএমইটির স্মার্ট কার্ড এর ফটোকপি নিয়ে যোগাযোগ করবেন। এই কাগজপত্র গুলো ব্যবস্থাপক বা ব্যাংক কর্মকর্তা দেখে, যাচাই করে, আপানকে গ্যারান্টর বা জামিনদার বিষয়ে জানতে চাইবে। মনে আপনি ঋণ গ্রহণকালে কাকে কাকে জামিনদার হিসেবে রাখতে চান এবং তাঁরা আপনার এই ঋণের দ্বায়ীত্ব নিবেন কি না এই বিষয়গুলো ভালোভাবে বুঝে নিবেন। মনে রাখবেন, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক এর ঋণ এর পরিমাণ নির্ভর করে ভালো ভিসা এবং ভালো জামিনদার এর উপর। ভালো ভিসা বলতে যেই ভিসার সাথে কন্ট্রাক্ট পেপার আছে আর ভলো জামিনদার বলতে সরকারি বা বেসরকারি ভালো কম্পানিতে চাকরি করে এমন লোককে জামিনদার হিসেবে প্রস্তাব করলে ব্যাংক বেশী আস্থা পায় এবং বেশি ঋণ দিতে আগ্রহী হয়। প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে আপনি অভিবাসন ঋণ সর্বোচ্চ ৩ (তিন) লক্ষ টাকা নিতে পারবেন। সুদের হার ৯% । ২ থেকে ৩ বছর সময় নিতে পারবেন পরিশোধ করার জন্য। এই ঋণ মাসিক কিস্তিতে পরিশোধ করতে হয়। ২ বছর হলে ২২ কিস্তিতে পরিশোধ, ৩ বছর হলে ৩৪ কিস্তিতে পরিশোধ। ২ মাস গ্রেস পিরিয়ড, মানে ২ মাস পর থেকে আপনি কিস্তি পরিশোধ করার সুযোগ পাবেন। আপনি চাইলে যে কোন সময় পরিশোধ করে দিতে পারবেন। যতদিন যেই পরিমান টাকা ব্যবহার করবেন তত টাকার উপর ৯% সুদ হিসাব হবে। যত আগে পরিশোধ করবেন তত কম সুদ দিতে হবে, দেরী করলে বেশী সুদ দিতে হবে।
ঋণ নিতে আপনার হালনাগাদ পাসপোর্ট সাইজ ছবি ৪ কপি, জাতীয় পরিচয়পত্র, চেয়ারম্যান সার্টিফিকেট, ভিসা, পাসপোর্ট, কন্ট্রাক্ট পেপার, বিএমইটির স্মার্ট কার্ড, বিমান টিকেট (করা থাকলে) এর ফটোকপি ও ব্যাংক হিসাবের তথ্য দিতে হয়। ২ থেকে ৩ জন জামিনদারের হালনাগাদ পাসপোর্ট সাইজ ছবি ২ কপি, জাতীয় পরিচয়পত্র, চেয়ারম্যান সার্টিফিকেট ও চাকুরীজীবি হলে পরিচয় পত্র বা প্রত্যয়ন পত্র ব্যবসায়ী হলে ট্রেডলাইসেন্স এর ফটোকপি দিতে হয়। যে কোন একজন জামিনদারের সঞ্চয়ী হিসাবের ৩ (তিন)টা চেকের পাতা, ঐ হিসাবের ৬ (ছয়) মাসের ব্যাংক স্টেটমেন্ট দিতে হয়। আপনার স্ত্রী বা মা-বাবাকে নমিনী হিসেবে হালনাগাদ পাসপোর্ট সাইজ ছবি ৪ কপি, জাতীয় পরিচয়পত্র, চেয়ারম্যান সার্টিফিকেট দিতে হয়। সব কাগজপত্র ঠিক থাকলে এক সপ্তাহের মধ্যে ঋণ পাওয়া যায়। এছাড়া সোনালী ব্যাংক, এরআরবিসি, ব্রাক সহ বিভিন্ন এনজিও সংস্থাও বিদেশ যাওয়ার জন্য ঋণ দেয়।
ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড এর সেবা নিন।
বিদেশ গমনেচ্ছু কর্মীর প্রাক বহির্গমন ব্রিফিং থেকে শুরু করে বীমা সুবিধা, আহত ও অসুস্থ কর্মীর চিকিৎসায় আর্থিক সহায়তা, পরিবহণের জন্য এম্বুলেন্স সেবা, মৃত কর্মীর লাশ দেশে আনা ও ক্ষতিপূরণ দেয়া, প্রবাসী কর্মীর সন্তানের জন্য শিক্ষাবৃত্তি, প্রবাসীর প্রতিবন্ধী সন্তানদের প্রতিবন্ধী ভাতা, বিদেশ ফেরত কর্মীদের পুনর্বাসন, প্রবাসীরা ঢাকায় অবস্থানের জন্য সেইফ হোম সহ সরকারিভাবে নানা সুযোগ-সুবিধা দেয় ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড। যে কোন প্রয়োজনে তাঁদের সাহায্য নিতে পারেন।
প্রবাসীদের জন্য সকল সরকারী ও বেসরকারি সুযোগ সুবিধার ও কলাণের তথ্য দিয়ে কাজ করে প্রবাসী সেবা। প্রবাসী সেবার ওয়েবসাইট নিয়মিত ভিজিট করুন। পেসবুক পেজ লাইক দিয়ে আপডেট থাকুন। ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করে নিত্য নতুন সুযোগ সুবিধা সম্পর্কে আপডেট থাকুন। আপনজন, বন্ধু-বান্ধব, পরিচিতজন কারো এই তথ্য কাজে লাগবে মনে হলে তাঁর সাথে শেয়ার করুন।
প্রবাসী সেবা অভিবাসী কর্মীদের উদ্দেশ্যে নির্ভুল তথ্য উপস্থাপনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত সকল তথ্য নির্ভরযোগ্য উৎস থেকে সংগৃহীত। যে কোন ধরণের ভুল উপস্থাপনা এড়াতে আমরা আমাদের ওয়েবসাইট নিয়মিত আপডেট করছি। তারপরেও, আপনি যদি ওয়েবসাইটে কোন ধরনের ভুল তথ্য খুজে পান, তাহলে আপনি আমাদেরকে ই-মেইল অথবা ফেসবুক মেসেজের মাধ্যমে জানাতে পারেন। আমরা আপনার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকব।