কিভাবে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স করবেন?
প্রবাসী সেবা December 1, 2022পুলিশ ক্লিয়ারেন্স কি? বিদেশ যাওয়ার জন্য কিভাবে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স করবেন? কিভাবে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট হাতে পাবেন? কিভাবে নিজেই অনলাইনে পুলিশ ক্লিয়ারেন্সের জন্য আবেদন করবেন? সবকিছু বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে এই লেখায়।
এই লেখায় যা আলোচনা করা হয়েছে:
- পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট কি?
- পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট পাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় শর্তাবলী কি?
- পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট পাওয়ার জন্য কি ডকুমেন্টস বা কাগজপত্র প্রয়োজন হবে?
- পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেটের জন্য কিভাবে আবেদন করবো?
- পুলিশ ক্লিয়ারেন্স এর ফি বা খরচ কত?
- বিকাশ, রকেট বা নগদের মাধ্যমে কিভাবে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স ফি জমা দেব?
- কিভাবে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স ওয়েবসাইটে ই-চালান আপলোড করবো?
- পুলিশ কর্মকর্তার কাছে আবেদনপত্র জমাদান।
- পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সম্পর্কিত কিছু সাধারণ প্রশ্ন এবং উত্তর।
পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট কি?
চাকুরি বা উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশ গমণের ক্ষেত্রে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট প্রয়োজন হয়। এর মাধ্যমে সার্টিফিকেট প্রাপ্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে থানায় কোনও ফৌজদারী অপরাধের রেকর্ড নেই – এই মর্মে প্রত্যয়ন করা হয়। অর্থাৎ পুলিশ ক্লিয়ারেন্স এর মাধ্যমে সার্টিফিকেট প্রাপ্ত ব্যাক্তি অপরাধী নন, এবং তার বিরুদ্ধে থানায় কোনও অভিযোগ নেই এই বিষয়টি নিশ্চিতকরণ করা হয়। পুলিশ কোনও অপরাধীকে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট প্রদান করে না।
বিজ্ঞাপন
পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট পাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় শর্তাবলী।
পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট পাওয়ার শর্তাবলী হলো –
১. আবেদনকারীর কমপক্ষে ৩ মাস মেয়াদ সম্পন্ন পাসপোর্ট থাকতে হবে।
২. আবেদনকারীর বর্তমান ঠিকানা হিসেবে পাসপোর্টে উল্লিখিত স্থায়ী কিংবা জরুরী ঠিকানার যে কোন একটি ব্যবহার করতে হবে এবং আবেদনকারীকে অবশ্যই ঐ ঠিকানার বাসিন্দা হতে হবে।
৩. মেশিন রিডেবল পাসপোর্টের (এম আর পি) এর ক্ষেত্রে যদি পাসপোর্টে ঠিকানা উল্লেখ না থাকে তবে ঠিকানার প্রমাণ স্বরূপ জাতীয় পরিচয় পত্র/জন্ম নিবন্ধন সনদপত্র/স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর এর সনদপত্রের ফটোকপি ১ম শ্রেণীর সরকারী গেজেটেড কর্মকর্তা দ্বারা সত্যায়িত করে দাখিল করতে হবে ।
৪. বিদেশে অবস্থানকারী বাংলাদেশী পাসপোর্টধারী কোনও ব্যক্তির পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট পাওয়ার জন্য তিনি যে দেশে অবস্থান করছেন সে দেশে বাংলাদেশ দূতাবাস/হাইকমিশন কর্তৃক পাসপোর্টের তথ্য পাতার সত্যায়িত কপি তার পক্ষে করা আবেদনের সাথে দাখিল করতে হবে ।
৫. বিদেশগামী কিংবা প্রবাসী বাংলাদেশী নাগরিক যারা বাংলাদেশ ব্যতীত অন্য কোনও দেশ থেকে পাসপোর্ট ইস্যু/রি-ইস্যু করিয়েছেন তাদেরকে বাংলাদেশে আসার পর পুলিশ ক্লিয়ারেন্স নিতে চাইলে সর্বশেষ এরাইভেল (Arrival) সিল সম্বলিত পৃষ্ঠাটির স্ক্যান কপি আবেদনের সাথে আপলোড করতে হবে।
৬. প্রবাসী আবেদনকারীগণ যার মাধ্যমে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সনদ সংগ্রহ করতে চান তার নাম এবং জাতীয় পরিচয় পত্রের নম্বর উল্লেখ করে তাকে সত্যায়ন পূর্বক একটি অনুমতি পত্র (Authorization Letter) আবেদনের সাথে আপলোড করতে হবে। স্থানীয় আবেদনকারীর ক্ষেত্রেও সনদ গ্রহণের সময় সংগ্রহকারীকে অনুরূপ অনুমতি পত্রসহ প্রেরণ করতে হবে।
৭. বাংলাদেশের অভ্যন্তরে চাকুরী কিংবা অন্য কোন কাজে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স প্রয়োজন হলে আপনি যে জেলার বাসিন্দা উক্ত জেলা ডিএসবি অফিস অথবা আপনার ঠিকানা যদি মেট্রোপলিটন এলাকায় হয় তাহলে উক্ত মেট্রোপলিটন এলাকার সিটি এসবি অফিসে যোগাযোগ করুন।
পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট পাওয়ার জন্য কি ডকুমেন্টস বা কাগজপত্র প্রয়োজন হবে?
পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট পাওয়ার জন্য আপনার যেসব ডকুমেন্টস বা নথিপত্র প্রয়োজন হবে সেগুলো হলো –
১. অনলাইনে যথাযথভাবে পূরণকৃত আবেদন পত্র ।
২. ১ম শ্রেণীর গেজেটেড কর্মকর্তা দ্বারা সত্যায়িত পাসপোর্টের তথ্য পাতার স্ক্যানকপি।
৩. বিদেশে অবস্থানকারী বাংলাদেশী নাগরিকগনের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দেশে বাংলাদেশ দূতাবাস কর্তৃক সত্যায়িত পাসপোর্টের তথ্য পাতার স্ক্যানকপি।
৪. বিদেশী নাগরিকদের ক্ষেত্রে নিজ দেশের জাস্টিস অব পিস (Justice of Peace) কর্তৃক সত্যায়িত পাসপোর্টের তথ্য পাতার স্ক্যানকপি।
৫. সোনালী ব্যাংকের যে কোন শাখা থেকে (১-৭৩০১-০০০১-২৬৮১) চালান কোডে করা ৫০০/- (পাঁচশত) টাকা মূল্যমানের ট্রেজারী চালান অথবা অনলাইনে ক্রেডিট/ডেবিট কার্ডের মাধ্যমে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে নির্ধারিত সার্ভিসচার্জ সহ ফি প্রদান।
বিজ্ঞাপন
পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেটের জন্য কিভাবে আবেদন করবো?
যদি চাকুরি বা উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশ গমনের উদ্দেশ্যে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট প্রয়োজন হয় তাহলে অবশ্যই আনলাইনে আবেদন করতে হবে। অন্যদিকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে চাকুরী কিংবা অন্য কোনও কাজে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স প্রয়োজন হলে আপনি যে জেলার বাসিন্দা উক্ত জেলা ডিএসবি অফিস (জেলা বিশেষ শাখা) অথবা আপনার ঠিকানা মেট্রোপলিটন এলাকায় হলে উক্ত মেট্রোপলিটন এলাকার সিটি এসবি অফিসে যোগাযোগ করতে হবে।
এই লেখায় আমরা আলোচনা করবো কিভাবে বিদেশ গমনের উদ্দেশ্যে অনলাইনে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স পাওয়ার জন্য আবেদন করবেন। আপনাদের সুবিধার্থে আমরা সম্পূর্ণ প্রকৃয়াটিকে কয়েকটি ধাপে ভাগ করেছি।
ধাপ – ০১: পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট ওয়েবসাইটে নিবন্ধন।
পুরো প্রকৃয়াটি আপনারা মোবাইল ফোন বা কম্পিউটার ব্যবহার করে করতে পারবেন। প্রথমেই যেকোন ইন্টারনেট ব্রাউজার (Google Chrome, Opera Mini বা Safari) থেকে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট ওয়েবসাইট ভিজিট করুন। পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট ওয়েবসাইট ওপেন হলে ওয়েবসাটের বামপাশ থেকে Registration বাটনে ক্লিক করুন। নিচের ছবির মতো একটি একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন ফরম ওপেন হবে।
ফরমটিতে আপনার পাসপোর্ট অনুযায়ী Block Letter/Capital Letter এ নাম লিখবেন। তারপর আপনার একটি সচল মোবাইল নম্বর এবং জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) নম্বর দিন। ইমেইলের ঘরে আপনার একটি সচল ইমেইল এড্রেস প্রদান করতে পারেন। ইমেইল না দিলেও সমস্যা নেই। আবেদনকারী যদি বিদেশি নাগরিক বা শিশু হয় তাহলে Foreign/Child এর ঘরটিতে টিক দিতে হবে। পাসওয়ার্ডের ঘরে ইচ্ছেমতো পাসওয়ার্ড দিবেন। মনে রাখবেন পাসওয়ার্ড কমপক্ষে ৮ অক্ষর দীর্ঘ হতে হবে এবং একটি সংখ্যা, একটি অক্ষর ও একটি বিশেষ অক্ষর থাকতে হবে। যেমন amarpass@22। চেষ্টা করবেন পাসওয়ার্ডটি কোথাও নোট করে রাখতে যাতে ভুলে না যান। তারপর ক্যাপচা পূরণ করে Continue বাটনে ক্লিক করুন।
বিজ্ঞাপন
ধাপ – ০২: মোবাইল নম্বর ভেরিফিকেশন।
এই ধাপে আপনার প্রদত্ত মোবাইল নম্বরটি ভেরিফাই করা হবে। ভেরিফিকেশনের জন্য নিচের ছবির মতো করে একটি কোড দেয়া হবে।
এক্ষেত্রে আমার কোডটি হচ্ছে PCC AV 5121। আপনাকে দেয়া কোডটি আপনার মোবাইল নম্বর থেকে 26969 নম্বরে ৫ মিনিটের মধ্যে SMS করে পাঠাতে হবে। নম্বরটি ভেরিফাই হলে আপনাকে “Your account is successfully verified” এমন একটি SMS পাঠানো হবে।
ধাপ – ০৩: একাউন্ট সাইন-ইন এবং ব্যক্তিগত তথ্য প্রদান।
মোবাইল নম্বর ভেরিফাই করার পর আপনার একাউন্টে সাইন-ইন করতে হবে। সাইন-ইন করার জন্য স্ক্রিন এর My Account বাটনে ক্লিক করুন। তারপর আপনার মোবাইল নম্বর এবং পাসওয়ার্ড (ধাপ – ০১) প্রদান করে Sign In বাটনে ক্লিক করুন। সাইন-ইন হয়ে গেলে নিচের ছবির মতো Dashboard দেখতে পাবেন।
তারপর Apply বাটনে ক্লিক করে আপনার পুলিশ ক্লিয়ারেন্সের উদ্দ্যেশ্য বাচাই করবেন। আপনি যেহুত বিদেশ যাওয়ার জন্য আবেদন করছেন সেহুত Go Abroad সিলেক্ট করবেন। তারপর Country of Travel থেকে আপনি কোন দেশে যেতে চান তা সিলেক্ট করে দিবেন। দেশের নাম সিলেক্ট করার পর আপনার ব্যক্তিগত তথ্য প্রদানের জন্য একটি ফরম ওপেন হবে।
বিজ্ঞাপন
➤ Father’s/Husband Name এর ঘরে আপনার বাবা অথবা স্বামী যেকোন একজনের নাম পাসপোর্ট অনুসারে দিবেন। তারপর নিচের অপশন থেকে বাবার নাম দিলে Father এবং স্বামীর নাম দিলে Spouse সিলেক্ট করে দিবেন।
➤ Solutation অপশন থেকে পুরুষের জন্য Mr. এবং মহিলার জন্য Ms. সিলেক্ট করবেন। তারপর Photo অপশনে আপনার পাসপোর্ট সাইজের একটি ছবি আপলোড করবেন। ছবির সাইজ ১৫০ কেবি এর বেশি হওয়া যাবে না। তারপর Save & Next বাটনে ক্লিক করুন।
ধাপ – ০৪: ব্যক্তিগত ঠিকানা প্রদান।
এই ধাপে আপনাকে ব্যক্তিগত ঠিকানা প্রদান করতে হবে। প্রথমে অংশে আপনার জরুরী যোগাযোগের ঠিকানা (Emargency Contact Address) এবং স্থায়ী ঠিকানা (Permanent Contact Address), দ্বিতীয় অংশে আপনার বর্তমান ঠিকানা (Present Address) প্রদান করতে হবে। এক্ষেত্রেও লাল স্টার চিহ্নিত ঘরগুলো অবশ্যই পূরণ করতে হবে। ।
Emergency Contact Address এবং Permanent Contact Address অবশ্যই পাসপোর্ট অনুসারে প্রদান করবেন। এক্ষেত্রেও পাসপোর্টের তথ্য পাতায় প্রয়োজনীয় সব তথ্য পেয়ে যাবেন।
বিজ্ঞাপন
একইভাবে Present Address এর ক্ষেত্রে আপনার বর্তমান ঠিকানা প্রদান করুন। প্রয়োজনে আপনার NID কার্ডের সাহায্য নিতে পারেন। এই ঠিকানাতেই আপনার পুলিশ ভেরিফিকেশন সম্পন্ন করা হবে তাই এই ঠিকানাটি সঠিকভাবে প্রদান করবেন। ঠিকানা প্রদান শেষে Save & Continue বাটনে ক্লিক করে পরের ধাপে চলে যাবেন।
ধাপ – ০৫: প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস আপলোড।
এই ধাপে আপনাকে পাসপোর্ট, জাতীয় পরিচয়পত্র (NID), জন্ম নিবন্ধন সনদপত্র, ওয়ার্ড কাউন্সিলরের সার্টিফিকেট এবং অন্যান্য ডকুমেন্টস বা কাগজপত্র আপলোড করতে হবে। তবে সাধারণত পাসপোর্ট ও জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) বা জন্ম নিবন্ধন সনদ আপলোড করলেই চলে। এক্ষেত্রে ডকুমেন্টস গুলো শুধুমাত্র পিডিএফ অথবা ছবি হিসেবে .pdf, .jpeg, .png, অথবা .gif এই কয়েকটি ফাইল ফরমেটে আপলোড করতে পারবেন। ফাইলের সাইজ সর্বোচ্চ ২০০ কেবি।
Passport এর পাশের Add বাটনে ক্লিক করার পর নতুন একটি উইন্ডো ওপেন হবে। সেখান থেকে Add file বাটন থেকে আপনার পাসপোর্টের তথ্য পাতার ছবি বা স্ক্যানড পিডিএফ আপলোড করে দিবেন। ফাইলটি আপলোড হয়ে গেলে Passport এর পাশে একটি সবুজ টিক চিহ্ন দেখতে পাবেন। একই ভাবে অন্যান্য ফাইলগুলো আপলোড করবেন। Others এ কোন ডকুমেন্ট আপলোড না করলেও সমস্যা নেই। তারপর Save & Continue বাটনে ক্লিক করে পরের ধাপে চলে যাবেন।
বিজ্ঞাপন
ধাপ – ০৬: তথ্য যাচাই ও অবেদনপত্র সাবমিট।
এই পর্যায়ে আপনাকে আবেদনপত্রের একটি নমুনা দেখানো হবে। এখান থেকে আপনি আপনার দেওয়া তথ্য গুলোতে কোন ভুল আছে কিনা তা যাচাই করে নিতে পারবেন। যদি কোন ভুল থাকে তাহলে Edit বাটনে ক্লিক করে তা সংশোধন করতে পারবেন। সব তথ্য ঠিক থাকলে Final Submit অপশনে টিক দিয়ে Confirm বাটনে ক্লিক করে আবেদন সম্পন্ন করতে হবে। মনে রাখবেন, আবেদনটি সাবমিট করার পর আপনাকে আর কোন কিছু এডিট করতে দেয়া হবে না।
আবেদন সাবমিট করার পর আপনাকে Reference No, Passport No সহ আরো কিছু তথ্য দেখানো হবে। পরবর্তী সময়ে ব্যবহারের জন্য এই তথ্যগুলো ডায়রিতে নোট করে রাখবেন। আবেদন প্রক্রিয়া শেষে পরবর্তী পর্যায়ে আমাদেরকে মোবাইল ব্যাংকিং, ক্রেডিট কার্ড বা সোনালী ব্যাংক লিমিটেডের মাধ্যমে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স ফি জমা দিতে হবে।
পুলিশ ক্লিয়ারেন্স এর ফি বা খরচ কত?
বিজ্ঞাপন
পুলিশ ক্লিয়ারেন্স এর সরকারি ফি ৫০০ টাকা। এই ফি আপনি সোনালী ব্যাংকের যে কোন শাখায় ১-৭৩০১-০০০১-২৬৮১ চালান কোডে করা ট্রেজারী চালান ব্যবহার করে সরাসরি ব্যাংকে প্রদান করতে পারবেন। আবার সোনালী ব্যাংক একাউন্ট, অনলাইন মোবাইল ব্যাংকিং অথবা ক্রেডিটা কার্ড ব্যবহার করেও এই ফি পরিশোধ করতে পারবেন।
এই লেখায় আমরা বিকাশ, রকেট বা নগদ ব্যবহার করে ই-চালান এর মাধ্যমে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স ফি প্রদান করবেন তা আলোচনা করেছি।
কিভাবে বিকাশ, রকেট বা নগদের মাধ্যমে কিভাবে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স ফি জমা দেব?
আবেদনপত্র সাবমিট করার পর কম্পিউটার বা মোবাইলে এমন একটি স্ক্রিন দেখতে পাবেন।
অনলাইন মোবাইল ব্যাংকিং (বিকাশ, নগদ, রকেট) ব্যবহার করে ফি পরিশোধ করার জন্য প্রথম অপশন থেকে Click বাটনে ক্লিক করবেন। ক্লিক করার পর নতুন ট্যাবে আপনার তথ্য সংবলিত একটি ই-চালান ওপেন হবে। এক্ষেত্রে আপনার ব্রাউজার যদি কোন ওয়ার্নিং দেখায় তাহলে Sent anway বা Ok অপশনে ক্লিক করলে চালানের ওয়েবপেইজটি ওপেন হবে।
ই-চালান ওয়েবসাইটের চালান ফরমে আপনার সব তথ্য পূরণ করা থাকবে। তথ্যগুলো একবার যাচাই করে নিচের পরিশোধ বাটনে ক্লিক করলে সোনালী ব্যাংক লিমিটেড এর অনলাইন পেমেন্ট গেটওয়ে ওপেন হবে।
বিজ্ঞাপন
এখানে আপনি রেফারেন্স নম্বর, ইনভয়েস নম্বর, মোবাইল নম্বর ইত্যাদি তথ্য দেখতে পাবেন। এখানে আপনি সোনালী ব্যাংক একাউন্ট, ক্রেডিট কার্ড অথবা মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবহার করে পেমেন্ট করতে পারবেন। আমরা বিকাশের মাধ্যমে পেমেন্ট করার জন্য Mobile Banking অপশন থেকে bKash এ ক্লিক করবো। তারপর বিকাশ থেকে কত টাকা কেটে নেয়া হবে তা দেখনো হলে Ok তে ক্লিক করবেন। আমার ক্ষেত্রে ৫০৩.৫০ টাকা কেটে নিয়েছিল।
তারপর Pay wtih bKash বাটনে ক্লিক করে বিকাশ পেমেন্ট সম্পন্ন করতে হবে। এক্ষেত্রে আপনার বিকাশ নম্বর, বিকাশ ওটিপি এবং পাসওয়ার্ড দিয়ে পেমেন্ট করতে হবে। পেমেন্ট সফল্ভাবে সম্পন্ন হলে আপনারা এমন একট পেইজ দেখতে পাবেন।
এ পর্যায়ে চালান ডাউনলোড বাটনে ক্লিক করলে চালানটি প্রিন্ট করার অপশন দেখতে পাবেন। প্রিন্ট বাটনে ক্লিক করলে চালান এর কপি প্রিন্ট বা পিডিএফ (PDF) ফাইল হিসেবে ডাউনলোড করার অপশন পাবেন। এপর্যায়ে চালানটি অবশ্যই প্রিন্ট অথবা পিডিএফ (PDF) ফাইল হিসেবে ডাউনলোড করে রাখতে হবে। পরবর্তী সময়ের প্রয়োজনে এই পেইজের তথ্যগুলো বিশেষ করে ট্রান্সেকশন নম্বর এবং চালান নম্বর নোট করে বা স্কিনশট নিয়ে রাখতে হবে।
কিভাবে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স ওয়েবসাইটে ই-চালান আপলোড করবো?
বিজ্ঞাপন
ই-চালান ওয়েবসাইটে পেমেন্ট করা হয়ে গেলে পিডিএফ (PDF) ফাইল হিসেবে ডাউনলোড করা ই-চালান পুলিশ ক্লিয়ারেন্স ওয়েবসাইটে আপলোড করতে হবে। চালান আপলোড করার জন্য পুলিশ ক্লিয়ারেন্স ওয়েবসাইট ওপেন করতে হবে। তারপর মেনু থেকে My Account এবং তারপর Upload Chalan বাটনে ক্লিক করুন। এরকম একটি ওয়েবপেইজ ওপেন হবে।
পেইজটিতে Bank Name হিসেবে SONALI BANK, District হিসেবে DHAKA এবং Branch হিসেবে LOCAL OFFICE BRANCH সিলেক্ট করবেন। বিকাশ, রকেট বা নগদ পেমেন্ট এর ক্ষেত্রে এই তথ্যগুলো অপরিবর্তিত থাকবে। তারপর Chalan Date এর ঘরে যে তারিখে চালান জমা হয়েছে সে তারিখটি দিবেন। Chalan No এর ঘরে আগের ধাপে নোট করা চালান নম্বর দিয়ে Check Chalan বাটনে ক্লিক করলে Payee হিসেবে আপনার নাম প্রদর্শন করবে। আর যদি আপনার নাম প্রদর্শন না করে তাহলে একদিন (২৪ ঘন্টা) পর আপনাকে এই একই তথ্য গুলো প্রদান করে আবার চেষ্টা করে দেখতে হবে।
সোনালী ব্যাংকে চালান জমা দেওয়ার পরেরদিন দুপুর ১২টার পর সার্ভার আপডেট হয়। তাই চালান জমা দেওয়ার একদিন পর পুলিশ ক্লিয়ারেন্স ওয়েবসাইটে চালানের পিডিএফ আপলোড করতে পারবেন।
আপনার নাম প্রদর্শন করা হলে ডানপাশের Document File অপশন থেকে আপনার ডাউনলোড করা চালানের পিডিএফ ফাইল সিলেক্ট করতে হবে। তারপর Upload বাটনে ক্লিক করলে চালানটি আপলোড হয়ে যাবে।
শেষের ধাপে আপনার আবেদন সংক্রান্ত কিছু তথ্য (Ref No, Passport, Name, Mobile) প্রদর্শিত হবে। এই পেইজের বাটনে Finish ক্লিক করলেই আপনার অনলাইন আবেদন প্রকৃয়া শেষ হবে।
অনলাইন আবেদন প্রকৃয়া শেষে এমন উপরের ছবির মতো একটি পেইজ ওপেন হবে। এখানে Ref No-এ ক্লিক করলে নতুন ট্যাবে আপনার আবেদনপত্র ওপেন হবে। প্রিন্ট বাটনে ক্লিক করলে আবেদনপত্র প্রিন্ট অথবা পিডিএফ হিসেবে সেইভ/ডাউনলোড করার অপশন পাবেন। অবশ্যই আবেদনপত্র সেইভ/ডাউনলোড করে রাখবেন। আবেদনপত্রটি পরবর্তী সময়ে প্রিন্ট করে অন্যান্য কাগজপত্রের সাথে দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তাকে প্রদান করতে হবে।
শেষ ধাপ: পুলিশের কাছে কাগজপত্র জমাদান।
বিজ্ঞাপন
সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে, কিছুদিন পর আপনার মোবাইল নম্বরে একটি SMS এর মাধ্যমে একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তার নাম, মোবাইল নম্বর ইত্যাদি তথ্য প্রদান করা হবে। পুলিশ কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করলে তিনি আপনাকে অনলাইন আবেদনপত্র, চালান ফরম (যেগুলো আপনি পূর্ববর্তী ধাপে ডাউনলোড করেছেন) এর প্রিন্ট কপির সাথে অন্যান্য কিছু কাগজপত্র জমা দিতে বলবেন। তাই ডাউনলোড করা পিডিএফ গুলো কোনও কম্পিউটার দোকান থেকে বা বাসার প্রিন্টার ব্যবহার করে প্রিন্ট করে রাখবেন। কাগজপত্র জমা দেওয়া হয়ে গেলে আপনার কাজ শেষ। কিছুদিন পর আপনাকে থানা হতে SMS এর মাধ্যমে আপনার আবেদনের সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে জানানো হবে।
বিজ্ঞাপন
পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সম্পর্কিত কিছু সাধারণ প্রশ্নের উত্তর।
বিজ্ঞাপন
➤ পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট পেতে কোথায় যোগাযোগ করতে হয়?
➣ সাধারণত অনলাইনে আবেদন করার পর থানা থেকে আবেদনরাকীর সাথে যোগাযোগ করা হয়। তবে আবেদনকারী চাইলে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট এর জন্য নিকটস্থ থানা বা জেলা SB অফিসে যোগাযোগ করতে পারেন।
➤ পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সর্বশেষ অবস্থা কিভাবে জানবো?
➣ আপনার মোবাইলে SMS এর মাধ্যমে আপনার আবেদনের সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে জানতে পারবেন। মোবাইল এর SMS অপশন থেকে PCC S তারপর আপনার রেফারেন্স নম্বর লিখে (উদাহরণ: PCC S A23555566) পাঠিয়ে দিন 26969 নম্বরে। ফিরতি SMS এর মাধ্যমে আবেদনের সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে জানানো হবে।
➤ পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট কত দিন পর পাওয়া যায়?
➣ আবেদনকারীর প্রদানকৃত তথ্যে কোনও গরমিল না থাকলে এবং কোনও মামলা না থাকলে সাধারণত ৭ থেকে ১০ কর্মদিবসের মধ্যেই পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট পাওয়া যায়।
➤ পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট এর মেয়াদ কতদিন থাকে?
➣ পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেটের মেয়াদ ৩ মাস বা ৯০ দিন। মেয়াদ শেষে নতুন করে আবার পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট করতে হয়।
➤ পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট সংক্রান্ত সাহায্য কিভাবে পাবো?
➣ পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট সংক্রান্ত যেকোনও সহযোগিতা, তথ্য, মতামত অথবা অভিযোগের জন্য যোগাযোগ করতে পারেন পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স আইটি হেল্প ডেস্কে। কল করুন (রবিবার থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৪টা সরকারি ছুটি ব্যতীত) 01320001824 বা 01320001825 নম্বরে অথবা ই-মেইল করুন ssaphq@gmail.com ঠিকানায়।
এই লেখার মাধ্যমে আমরা পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট আবেদন সম্পর্কে বিস্তারিত জানানোর চেষ্টা করেছি। এই আবেদন প্রকৃয়া বাংলাদেশ পুলিশ কতৃক প্রতিনিয়ত হালনাগাদ করা হয়। তাই এই লেখার কোনও কিছু যদি আপনার আবেদনের সময় না মিলে তাহলে কমেন্ট করে বা ইমেইলের মাধ্যমে আমাদের জানানোর জন্য বিনীত অনুরোধ করছি। আমরা স্বল্প সময়ের মধ্যে লেখাটি আপডেট করার চেষ্টা করবো।