প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক কি? এই ব্যাংক থেকে কি কি সেবা পাওয়া যায়?
প্রবাসী সেবা September 2, 2022প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক কি? প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক কি ধরণের সেবা প্রদান করে থাকে। প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক কাদেরকে সেবা প্রদান করে। প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক কত ধরণের ঋণ প্রদান করে করে? কিভাবে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের ঋণ বা লোন পাওয়া যাবে ইত্যাদি আলোচনা করা হয়েছে প্রবাসী সেবার এই লেখায়।
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক কি?
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক হল বাংলাদেশের একটি রাষ্ট্রমালিকানাধীন বিশেষায়িত বাণিজ্যিক ব্যাংক। প্রবাসী বাংলাদেশীদের আর্থিক সেবা প্রদানের লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার ২০১০ সালে এই ব্যাংকটি প্রতিষ্ঠা করে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকায় কলম্বো প্রসেস এর ৪র্থ সম্মেলন চলাকালীন সময় ২০১১ সালের ২০ শে এপ্রিল এই ব্যাংকের শুভ উদ্বোধন করেন। এরপর ২০১৮ সালের ৩০ জুলাই বাংলাদেশ ব্যাংক একটি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংককে দেশের ৫৮ তম ব্যাংক হিসেবে তফসিলি বিশেষায়িত ব্যাংকরূপে তালিকাভূক্ত করে। এটি মহান জাতীয় সংসদে ২০১০ সালের ৫৫নং আইন (প্রবাসী কল্যান ব্যাংক আইন-২০১০) এর দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়। এই ব্যাংক প্রতিষ্ঠার প্রধান উদ্দেশ্য কর্মসংস্থানের উদ্দেশ্যে বিদেশে গমনেচ্ছু বাংলাদেশী বেকার যুবকদের সহায়তা প্রদান, প্রবাসী বাংলাদেশীদের দেশে প্রত্যাগমনের পর কর্মসংস্থানের সহায়তা প্রদান, প্রবাসী বাংলাদেশীদের দেশে বিনিয়োগে উৎসাহিতকরণ এবং আধুনিক তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে দ্রুত ও ব্যয়-সাশ্রয়ী পন্থায় সহজে রেমিট্যান্স প্রেরণে প্রবাসী বাংলাদেশীদের সহায়তা প্রদান।
বিজ্ঞাপন
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে কি কি সেবা পাওয়া যায়?
অভিবাসী কর্মীদের সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক বিভিন্ন ধরনের ঋণ সেবা দিয়ে আসছে। নিম্নে প্রবাসী কল্যান ব্যাংক এর বিভিন্ন ধরণের ঋণ সেবা সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো।
অভিবাসন ঋণ
বৈধপথে বিদেশ গমণের সময় বিদেশ গমণের বৈধ কাগজপত্র দিয়ে প্রবাসগামী কর্মীরা ১ থেকে ৩ লক্ষ টাকা অভিবাসন ঋণ নিতে পারেন, যা দুই বছরের মধ্যে ২২ কিস্তিতে পরিশোধ করা যায়। সিঙ্গাপুরের ক্ষেত্রে ১০ কিস্তিতে এক বছরের মধ্যে এই ঋণ পরিশোধ করতে হয়। প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের অভিবাসন ঋণের সুদের হার ৯%।
তাছাড়া, প্রবাসী কর্মীরা দেশে বেড়াতে এসে আবার বিদেশ ফেরত যাওয়ার সময় বিমান টিকিট বাবদ ১ থেকে ২ লক্ষ টাকা অভিবাসন ঋণ নিতে পারেন, যা এক বছরের মধ্যে ১০ কিস্তিতে পরিশোধ করা যায়। এক্ষেত্রেও ঋণের সুদের হার ৯%। অভিবাসন ঋণ সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এই লিংক থেকে।
পুনর্বাসন ঋণ
বৈদ প্রবাসী কর্মীরা যদি বিদেশ হতে একেবারে চলে আসেন এবং দেশে কোন বৈধ প্রকল্প বা ব্যবসার মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করতে চান সেক্ষেত্রে, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের পুনর্বাসন ঋণের মাধ্যমে পুনর্বাসনের জন্যে প্রকল্পের ধরন অনুযায়ী ১ থেকে ৩ লক্ষ টাকা পুনর্বাসন ঋণ নিতে পারবেন। এক্ষেত্রে, প্রকল্পের ধরন অনুযায়ী ঋণের কিস্তি ও গ্রেস পিরিয়ড নির্ধারিত হয়। এই ঋণেরও সুদের হার ৯%। পুনর্বাসন ঋণ সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এই লিংক থেকে।
বঙ্গবন্ধু অভিবাসী বৃহৎ পরিবার ঋণ
উদ্দেশ্যে বিদেশে অবস্থান করলে সে ক্ষেত্রে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক ঐ ব্যক্তি বা তার উপর নির্ভরশীল পরিবারের যেকোন সদস্য (পিতা, মাতা, স্বামী/স্ত্রী, প্রাপ্তবয়স্ক সন্তান, ভাই, বোন) কে সহজ শর্তে জামানতবিহীন/জামানতসহ বঙ্গবন্ধু অভিবাসী বৃহৎ পরিবার ঋণ প্রদান করে। এক্ষেত্রে প্রকল্পের ধরন অনুযায়ী আবেদনকারী ১ থেকে ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণ নিতে পারেন। প্রকল্প বা ব্যবসার ধরন অনুযায়ী কিস্তি ও ঋণের গ্রেস পিরিয়ড নির্ধারিত হয়। এক্ষেত্রেও ঋণের সুদের হার ৯%। বঙ্গবন্ধু অভিবাসী বৃহৎ পরিবার ঋণ সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এই লিংক থেকে।
কোভিড-১৯ বিশেষ পুনর্বাসন ঋণ
কোভিড-১৯ এর কারণে ক্ষতিগ্রস্ত অভিবাসী কর্মীকে পুনর্বাসনের জন্যে ১ থেকে ৫ লক্ষ টাকা বিশেষ পুনর্বাসন ঋণ দিচ্ছে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক। প্রবাসী কর্মীরা যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে কিংবা কাজ হারিয়ে ১ জানুয়ারী ২০২০ থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত দেশে ফিরে এসেছেন তারা দেশে যেকোন বৈধ প্রকল্প/ব্যবসা করার জন্যে এই ঋণের জন্যে আবেদন করতে পারবেন। এছাড়াও, যেসব প্রবাসী কর্মী কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়ে বিদেশে মারা গিয়েছেন তাদের পরিবারের একজন উপযুক্ত সদস্যও (পিতা, মাতা, স্বামী/স্ত্রী, প্রাপ্তবয়স্ক সন্তান, ভাই, বোন) এই বিশেষ ঋণের জন্যে আবেদন করতে পারবেন। প্রকল্পের ধরন অনুযায়ী ঋণের কিস্তি ও গ্রেস পিরিয়ড নির্ধারিত হয়। দুই লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণের জন্যে সহজামানতবিহীন এবং দুই লক্ষ টাকার অধিক ঋণের জন্যে জামানত সহ ঋণ নিতে পারবেন। এই বিশেষ ঋণের সুদের মাত্র হার ৪%। কোভিড-১৯ বিশেষ পুনর্বাসন ঋণ সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এই লিংক থেকে।
সঞ্চয় সেবা
বিজ্ঞাপন
প্রবাসীদের কষ্টার্জিত অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনা এবং তার নিরাপদ সঞ্চয়ে সহযোগিতা করার লক্ষ্যে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক বিভিন্ন ধরণের সঞ্চয় সেবা প্রদান করে। প্রবাসী এবং প্রবাস প্রত্যাগত কর্মীরা খুব সহজেই প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের সঞ্চয় হিসাব খুলতে পারবেন।সঞ্চয় হিসাব খোলার জন্যে ওয়েবসাইট হতে সঞ্চয় হিসাবের ফর্ম ও স্বাক্ষর কার্ড ডাউনলোড করে তা পূরণ করে সংস্লিষ্ট দেশের দুতাবাস/লেবার কাউন্সিলর কার্যালয় হতে সত্যায়ন করে ব্যাংকে পাঠালে ব্যাংক ঐ প্রবাসীর নামে সঞ্চয় হিসাব তৈরি করবে। প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক এর বিভিন্ন মেয়াদি সঞ্চয় প্রকল্পগুলো হলো বঙ্গবন্ধু সঞ্চয়ী স্কীম, বঙ্গবন্ধু ডাবল বেনিফিট স্কীম এবং বঙ্গবন্ধু শিক্ষা সঞ্চয়ী স্কীম ও বিবাহ সঞ্চয়ী স্কীম। প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক এর সঞ্চয় প্রকল্পগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে নিকটস্থ শাখায় কিংবা ব্যাংকের ওয়েবসাইটে ভিজিট করতে পারেন। তাছাড়াও প্রবাসে অবস্থানরত প্রবাসীরা প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের সঞ্চয় হিসাবের মাধ্যমে রেমিট্যান্স পাঠাতে পারবেন এবং এ ক্ষেত্রে তারা সরকার ঘোষিত ২% প্রণোদনা পাবেন।
বিভিন্ন ধরণের ঋণ সেবা এবং সঞ্চয় সেবা প্রদান ছাড়াও প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক বিদেশ যাওয়ার পূর্বে পরামর্শ প্রদান, ভিসা যাচাই সহ বিভিন্ন ভাবে প্রবাসীদের সাহায্য করে থাকে।